বিশেষ প্রতিবেদক
রাসেল হওয়ার পরে আমরা ভাইবোনেরা খুব খুশি ছিলাম। যেন খেলার পুতুল পেলাম হাতে। ও খুব আদরের ছিল আমাদের। একটা ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলতো। ওইটুকু একটা মানুষ, খুব স্ট্রং পার্সোনালিটি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তি জীবনের অজানা-অদেখা গল্প নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘হাসিনা: অ্যা ডটারস টেল’-এ প্রধানমন্ত্রী এভাবেই তুলে ধরেন ছোট্ট রাসেলকে।
যখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছোট্ট ভাইটিকে নিয়ে কথা বলেন তখনেই তার চোখে মুখে বিষাদ ছেয়ে যায়। শেখ রাসেলের মাত্র ১০ বছর ১০ মাসের জীবন তাকে যে গভীর ক্ষতবোধ দিয়েছিল, তা সবসময়ই ফুটে উঠে বড় বোন শেখ হাসিনার কণ্ঠে।
১৮ অক্টোবর, আজ শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলের ৫৫তম জন্মবার্ষিকীতে এক আলোচনা সভায় নিজে কোলে-পিঠে করে বড় করে তোলা এই ভাইয়ের নানা স্মৃতি তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া নিজের লেখা বইতে, নানা সাক্ষাৎকারে রাসেলের কথা এলেই শেখ হাসিনার কণ্ঠে বেদনা নেমে আসে। কখনও স্মৃতিকাতরতায় যেন বলতে থাকেন—জমে থাকা কষ্টের দিনগুলোর বিবরণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সব স্মৃতিকে এক জায়গায় করে বই লিখেছেন ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’। শেখ রাসেলের জন্মগ্রহণ থেকে শুরু করে তার জীবনকাহিনী এবং ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার ঘটনাপ্রবাহ বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে শেখ হাসিনা, রাসেলের ছোটবেলা থেকে শুরু করে পুরো জীবনের অনেক ঘটনা, জীবনযাপন, মা-বাবা, ভাইবোনের সঙ্গে তার সময় কাটানো, পড়ালেখা, স্বজনদের সঙ্গে বন্দিজীবন, ঘাতকের হাতে নিহত হওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
২০১৯ সালের জন্মদিনের আলোচনা সভায় বোন শেখ হাসিনা না বলা শিশু রাসেলের অনেক কথা উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন। স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, ‘বন্দিখানায় থাকা অবস্থায় যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, সেই যুদ্ধের সময় যখন আক্রমণ হতো, রাসেল পকেটে সব সময় একটু তুলা রাখতো। নিজের কানে দেওয়ার পাশাপাশি ছোট্ট জয়ের কানেও তুলা দিয়ে দিতো, যেন ওই আওয়াজে জয়ের কোনও ক্ষতি না হয়। রাসেল জয়ের প্রতি খুব খেয়াল রাখতো। সব সময়ই তার সেদিকে বিশেষ নজর ছিল।’
১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির স্মৃতি-বিজড়িত বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্ম শেখ রাসেলের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময় রক্ষা পায়নি এই শিশু। তখন সে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। আজ শহীদ রাসেলের জন্মদিন। শিশুরা আজ নানা আয়োজনে দিনটি পালন করছে।
‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইয়ের এক জায়গায় শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করেন, ‘আমাদের পাঁচ-ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রাসেল। ছোট্ট রাসেল আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। মা রাসেলকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সংসারের কাজ করতেন, স্কুল বন্ধ থাকলে তার পাশে শুয়ে আমি বই পড়তাম। আমার চুলের বেণি ধরে খেলতে খুব পছন্দ করতো ও। আমার লম্বা চুলের বেণিটা ওর হাতে ধরিয়ে দিতাম। ও হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে হাসতো। কারণ, নাড়াচাড়ায় মুখে চুল লাগতো তাতে খুব মজা পেতো।’
প্রায় সব বক্তৃতায়ই বোনের চোখ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখার চেষ্টা করেন রাসেল জীবিত থাকলে কত বড় হতো। রাসেলের জীবনের ইচ্ছে এবং তার কোমল হৃদয়ের চাওয়া নিয়ে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাসেলের খুব শখ ছিল সে বড় হয়ে আর্মি অফিসার হবে এবং সেভাবে কিন্তু সে নিজেকে তৈরি করতো। ছোট ছোট গরিব শিশুর প্রতি তার দরদ ছিল, যখন সে গ্রামে যেতো গ্রামের অনেক শিশুকে সে জোগাড় করতো। সে কাঠের বন্দুক বানাতো। শিশুদের জন্য মাকে বলতো কাপড় কিনে দিতে হবে। মা ঠিকই কিনে দিতেন। বাচ্চাদের সে প্যারেড করাতো।’