নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অযাচিতভাবে নাকগলানোর প্রতিবাদ জানাতে ‘সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শিল্পীসমাজ’ নামে চারুশিল্পীদের নতুন সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে। পাশাপাশি দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের মোট ১১টি স্থানে সড়ক জুড়ে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে শিল্প’ শীর্ষক কর্মসূচি নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারকুলা অনুষদ প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরে এই সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যাপক নিসার হোসেন। প্রাথমিকভাবে তারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অযাচিতভাবে নাকগলানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করবে।
সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শিল্পীসমাজের কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আহ্বায়ক অধ্যাপক আবুল বারাক আলভী ও অধ্যাপক ড.ফরিদা জামান, সদস্য সচিব অধ্যাপক নিসার হোসেন, শিল্পী নাসিম আহমেদ নাদভী, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস, শিল্পী আব্দুল মান্নান। সঞ্চালনা করেন শিল্পী জাহিদ মুস্তফা।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী চক্র সারাবিশ্বকে কুক্ষিগত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নির্লজ্জ ও নগ্নভাবে সর্বত্র আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে শত শত বছর ধরে। ইউরোপের বাইরের প্রত্যেক মহাদেশের প্রতিটি রাষ্ট্র তাদের সাম্রাজ্যবাদী শাসনে ও শোষণে এতোটাই পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে যে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের অবসান ঘটলেও তাদের সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তির হুমকিকে উপেক্ষা করে নিজ নিজ স্বার্থ ও মর্যাদাকে সমুন্নত রেখে দেশকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যখনই কোনো রাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে তখনই তাদের পরিণতি হয়েছে ভিয়েতনাম, চিলি, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক কিংবা ১৯৭১ বা ১৯৭৫-এর বাংলাদেশের মতো।
তাদের মতে, সম্প্রতি তাদের লেলিয়ে দেওয়া জঙ্গিদের মাধ্যমে সিরিয়া লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিরাট অঞ্চল ধ্বংসের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছে। তাদের সাথে হাত মিলিয়ে, তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পথ চলতে যেয়ে আজ পাকিস্তান রাষ্ট্রের কী পরিণতি হয়েছে তা তো আমরা সাদা চোখেই দেখতে পাচ্ছি। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বভুক্ত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর থেকেই সাম্রাজ্যবাদীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। তারা সংঘবদ্ধভাবে এদেশের প্রতিটি কাজে প্রতিটি সিদ্ধান্তে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করছে, বাধা দিচ্ছে। এমন কী আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিকে রোধ করার জন্য মানবতার শত্রু হিংস্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও তাদের দোসরদের পক্ষে প্রকাশ্য তৎপরতা চালাচ্ছে।
নিসার হোসেন জানান, জয়নুল-কামরুলের অনুসারী চারুশিল্পীরা দেশ এবং মানুষের কল্যাণে রং-তুলি-ক্যানভাস নিয়ে ১৯৫২ থেকে শুরু করে বাঙালির সকল ক্রান্তিকালে যেভাবে পথে নেমেছিল আজ আবারও একই ভাবে পথে নামবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই লক্ষ্যে আমরা দেশের সকল চারুশিল্পীদের নিয়ে গঠন করছি ‘সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শিল্পীসমাজ’ নামে একটি জাতীয় মোর্চা। কেন্দ্রীয়ভাবে এই মোর্চা একটি কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে, তার আহ্বায়কের দায়িত্ব যৌথভাবে পালন করবেন অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক আলভি এবং অধ্যাপক ড. ফরিদা জামান।
‘সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শিল্পীসমাজ’ ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে আছে, দেশের একাধিক স্থানে দিনব্যাপী ‘সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে শিল্প’ শিরোনামে প্রতিবাদী শিল্পকর্ম আঁকা ও শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর মাধ্যমে সম্পৃক্ত করবে দেশের সকল চারুশিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সমাজের সকল স্তরের মানুষকে। শিল্পীরা সাধারণ মানুষকে সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের দোসরদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করবে, এটাই এ আয়োজনের প্রধান উদ্দেশ্য।
দেশের মোট ১১টি স্থানে এবং শহরের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের সড়ক জুড়ে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে শিল্প’ শীর্ষক কর্মসূচি নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ আয়োজনটি হবে ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। আয়োজনের মধ্যে আছে- সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণচিত্রাঙ্কন, নির্বাচিত চারুশিল্পীদের চিত্রাঙ্কন, বিশালাকৃতির ব্যানারচিত্র আঁকা, পোস্টার প্রদর্শনী, কার্টুন প্রদর্শনী, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, জাগরণের গান (স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশিত দেশের গান ও গণসঙ্গীত) এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড সঙ্গীত ও স্থানীয় লোকসঙ্গীত দলের পরিবেশনা।
নিসার হোসেন জানান, ‘সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে শিল্প’ শীর্ষক এ আয়োজনে চিত্রাঙ্কন পর্বটি মূলত সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার উদ্দেশ্যে। নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, শিক্ষার্থীসহ সকল বয়সের সাধারণ মানুষ গণচিত্রাঙ্কণে অংশগ্রহণ করবে। ৫০০ ফুট দীর্ঘ কাপড়ে দেশ প্রেমিক মানুষ দেশের প্রতি ভালবাসা ও সাম্রাজ্যবাদের প্রতি ঘৃণা জানাবে রঙ-তুলির মাধ্যমে। গণশিল্পকর্ম রচনা ও প্রদর্শন পর্বটি উন্মুক্ত স্থানেই দিনব্যাপী চলমান থাকবে।
কর্মসূচিগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা, ফরিদপুর এবং বরিশালের বিভিন্ন জায়গায় আয়োজন করা হবে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর।