বরিশাল ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগের দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খামারি ও কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে বলেই খুচরা বাজারে আলু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর এ কারণে সরকারি দরের কোনো প্রভাব পড়ছে না। ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বাজার পরিদর্শনে গিয়ে তারাও এর সত্যতা পেয়েছেন। এদিকে, চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে তিন প্রতিষ্ঠানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আলু ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, দেশে আলুর কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু একটি অদৃশ্য হাত আলুর বাজারকে অস্থির করছে। শনিবার মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে কোল্ড স্টোরেজ পরিদর্শন গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সম্পর্কে ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
বরিশাল : বরিশালে আগের দামেই আলু পেঁয়াজ ডিম বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সরকার ৩৫-৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির ঘোষণা দেওয়ার ২ দিন পরও খুচরা বাজারে ৩৯ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস সাড়ে ১২ থেকে পৌনে ১৪ টাকা। দেশি পেঁয়াজের কেজি এখনো ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি না করা সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি দামই তো সরকারি দামের চেয়ে বেশি। তাহলে খুচরা বাজারে আমরা কী করে ওই দামে বিক্রি করব?’ ঝালকাঠীর নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাটের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক বশিরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় বাজারে এখনো ৪৮-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। প্রতি হালি ডিমের দাম পড়ছে ৫৩-৫৫ টাকা। ৮০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না দেশি পেঁয়াজ। বরিশাল নগরের পোর্ট রোডের আড়তদার জুয়েল হাওলাদার বলেন, রাজশাহী থেকে আনা আলু পরিবহণসহ প্রতি কেজির দাম পড়ে ৪১ টাকা। মুন্সীগঞ্জের ক্ষেত্রে আড়ত পর্যন্ত ৩৮ টাকা ৫০ পয়সা পড়ে প্রতি কেজির দাম। আড়ত পর্যন্ত আনতেই যেখানে এ খরচ সেখানে সরকার নির্ধারিত ৩৫-৩৬ টাকা দরে কিভাবে বিক্রি করব?
ব্যবসায়ীদের এ অভিযোগের সত্যতা মিলেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে। শনিবার নগরের বাজার রোড ও পোর্ট রোডের আড়তপট্টিতে অভিযান চালান তারা। দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটকে ব্যবসায়ীরা খামারি আর কোল্ড স্টোরেজ থেকে পণ্য কেনার চালান (মূল্য রসিদ) দেখান। কেনা দামের চেয়ে কী করে কম দামে পণ্য বিক্রি করবেন উলটো সেই প্রশ্ন তাদের। অধিদপ্তরের বরিশাল অফিসের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, সরকারের দাম ঘোষণা ও বাজার মনিটরিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ডিমের দাম অনেকটাই কমেছে। কমতে শুরু করেছে আলুর দামও। তাদের দামের বিষয়ে আমরা কোনো জরিমানা করিনি। তারা খামারি আর কোল্ড স্টোরেজের দরের চালান (রসিদ) দেখিয়েছে। বিষয়টি জানাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। উদ্যোগ যখন নেওয়া হয়েছে তখন দাম অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ে আসবে।
চট্টগ্রাম : নগরীতে সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি না করা, মূল্য তালিকা ও ক্রয় রসিদ না রাখায় দুটি আলুর আড়তসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। শনিবার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনাকারী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক নাসরিন হক জানান, চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে মূল্য তালিকা যথাযথ না থাকা, পণ্য বা আলু ক্রয়ের যথাযথ ভাউচার না থাকার অপরাধে আলু ও কুলিং কর্নারকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরমধ্যে চাক্তাইয়ের একটি আলুর আড়তকে ১ হাজার টাকা ও খাতুনগঞ্জের অপর একটি আড়তকে ২ হাজার টাকা। এছাড়া দোহা ফুড নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ফরিদপুর : জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সোহেল শেখ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে শহরের তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেন। তদারকির অংশ হিসাবে ফরিদপুরে হিমাগার, হেলিপোর্ট বাজার ও হাজী শরীয়তউল্লাহ বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সহকারী পরিচালক সোহেল শেখ জানান, সরকার নির্ধারিত দামে আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিম বিক্রি নিশ্চিতে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। হিমাগারে আলু বিক্রি কার্যক্রম তদারকি করা হয়। দাম বেশি নেওয়া, ক্রয় ভাউচার মূল্য ও তালিকা হালনাগাদ না থাকায় মেসার্স দিশারী ট্রেডার্সকে ২ হাজার টাকা এবং আলুর দাম বেশি নেওয়ায় মেসার্স হাওলাদার ট্রেডার্সকে ২ হাজার টাকা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদনের দায়ে ঘোষের হোটেলকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মুন্সীগঞ্জ : ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, এ বছর যে পরিমাণ আলুর উৎপাদন হয়েছে তাতে দেশে আলুর কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু একটি অদৃশ্য হাত আলুর বাজারকে অস্থির করছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।
মুক্তারপুরে রিভারভিউ কোল্ড স্টোরেজ পরিদর্শন শেষে মহাপরিচালক বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম বাস্তবায়ন করতে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলু বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার পাকা রসিদ ব্যবহার করতে হবে। পাকা রসিদ না থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিদর্শনকালে তিনি রিভারভিউ কোল্ড স্টোরেজে ১০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণের তথ্য পান। তবে পাকা রসিদ ছাড়া মোবাইল ফোনে দাম নির্ধারণ করে আলু বিক্রির খবরে আলু ব্যবসায়ী রসরাজ বাবুকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে বাবুর কথায় অসঙ্গতি থাকায় এবং পাকা রসিদ ছাড়া আলু বিক্রি করায় হিমাগারের সব আলু হেফাজতে নিয়ে ২৭ টাকা দামে বিক্রি করে টাকা বুঝিয়ে দিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে তিনি দায়িত্ব দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক আবুজাফর রিপন ও পুলিশ সদস্য আসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী) : সরকার নির্ধারিত তিনটি পণ্যের দাম মনিটরিংয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়েছে। অভিযানকালে হাবিব ট্রেডার্স ও বন্দন ট্রেডার্সকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানকালে হাবিব স্টোর প্রতি কেজি আলু ৩৮ টাকায় ক্রয় করে ৪০ টাকা বিক্রি এবং আলুর ক্রয় রসিদ দেখাতে না পারায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরে বন্দন ট্রেডার্স নামের আরও একটি প্রতিষ্ঠাকে ৪২ টাকা করে প্রতি কেজি আলু খুচরা বিক্রি এবং মূল্য তালিকা না থাকায় ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।