ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) এবং বাংলাদেশ দেশের বিদ্যুৎ খাতের টেকসই সবুজ রূপান্তরে অবদান রাখতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এটি দেশের জলবায়ু প্রশমন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের লক্ষ্যেও করা হয়েছে। বুধবার (২৫ অক্টোবর) ব্রাসেলসে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এসময় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে ইইউ ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে একটি নতুন অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন।
চুক্তি অনুযায়ী, ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো নবায়নযোগ্য জ্বালানীখাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং বিনিয়োগসহ ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর সহায়তা প্যাকেজ দ্বারা পরিপূরক। এর মধ্যে, ১২ মিলিয়ন ইউরোর গ্রিন এনার্জি ট্রানজিশন প্রকল্প, যার মধ্যে ৭ মিলিয়ন ইউরো জার্মানির সহ-অর্থায়নে পরিচালিত হবে। এর লক্ষ্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ শক্তি রূপান্তরকে সহজতর করার জন্য নীতি, আইনী কাঠামো এবং বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে কাজ করা।
প্রকল্পগুলো মূলত ইউটিলিটি স্কেল সৌর ফোটোভোলটাইক এবং উপকূলীয় বায়ু প্রকল্প এবং সম্ভাব্য শক্তি স্টোরেজ সিস্টেমের সমন্বয়ে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে জ্বালানি এবং গ্রামীণ উন্নয়নে সহজলভ্য করতে অবদান রাখবে। এই কার্যক্রম বাংলাদেশে আনুমানিক ৭৫০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা স্থাপনে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চুক্তি অনুযায়ী, বিনিয়োগগুলো বিদ্যুৎ বিতরণ এবং বিকেন্দ্রীকরণের উন্নতি করবে, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সংযোগ এবং স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করবে। কারিগরি সহায়তার অংশ হিসাবে ইইউ একই জমিতে শক্তি উৎপাদন এবং খাদ্য উৎপাদন, সৌর, হাইব্রিড সৌর / বায়ু এবং ব্যাটারির সঙ্গে সৌর একত্রিত করার উপায়সহ প্রকল্প প্রস্তাবগুলো নিরীক্ষা করতে সহায়তা করবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সৌর প্রকল্প ও উপকূলীয় বায়ু প্রকল্প জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। গ্রিন এনার্জি ট্রানজিশনের জন্য এই অংশীদারিত্ব একটি বাংলাদেশী আইনি কাঠামো তৈরিতে সহায়তা করবে যা অন্তর্ভুক্তিমূলক সবুজ শক্তি রূপান্তরের জন্য বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে এবং জ্বালানি খাতে প্রফেশনাল নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগও বৃদ্ধি করবে।
গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে ইইউ এবং বাংলাদেশের মধ্যে শিক্ষা খাতের (৩০ মিলিয়ন ইউরো), শালীন কাজের এজেন্ডা প্রচার, সবুজ নির্মাণ, কার্যকর ডিজিটাল গভর্নেন্স জোরদার এবং দেশের পাবলিক স্পেসে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা রোধে (প্রতিটি ক্ষেত্রে ১০ মিলিয়ন ইউরো) সহযোগিতার জন্য অতিরিক্ত ৭০ মিলিয়ন ইউরোর একটি প্যাকেজ স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি প্রসঙ্গে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন বলেন, ‘ইইউ ও বাংলাদেশ ৫০ বছর ধরে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত অংশীদার। এখন, গ্লোবাল গেটওয়ের অধীনে সবুজ রূপান্তরের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে আমরা এই অংশীদারিত্বকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। ইউরোপীয় কমিশন, ইআইবি এবং বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি সহায়তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একযোগে কাজ করবে। এই ৪০০ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ বাংলাদেশের জনগণ ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক নিয়ে আলাপ করেছি। আমরা গণতন্ত্র, মূল্যবোধ, মানবাধিকার, আইন নিয়ে আমাদের পরস্পরের ভাবনা তুলে ধরেছি। এই বছর বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশীদারিত্বের ৫০ তম বার্ষিকী। আমরা আনন্দিত যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ই ইউ’র গ্লোবাল গেটওয়ে উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। আমরা ইইউ’র সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি। এর মধ্যে আছে ইউরো ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে ৩৫০ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি। আমাদের সঙ্গে জলবায়ু ও নবায়নযোগ্য জালানি খাতে অংশীদার হওয়ার জন্য আমরা সাধুবাদ জানাই।
এ বছর ইইউ-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী। এই সময়ে ইইউ বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন, বাণিজ্য ও মানবিক অংশীদার হয়েছে। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিশ্বব্যাপী সরকারের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, চিন্তাবিদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডারদের একত্রিত করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং বিশ্বব্যাপী টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য অবকাঠামোতে বৈশ্বিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে।
গ্লোবাল গেটওয়ে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগের ব্যবধান হ্রাস এবং ডিজিটাল, জ্বালানি এবং পরিবহন খাতে স্মার্ট, পরিষ্কার এবং সুরক্ষিত সংযোগ বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং গবেষণা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইতিবাচক প্রস্তাব। গ্লোবাল গেটওয়ে কৌশলটি একটি টিম ইউরোপ পদ্ধতির প্রতীক যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইইউ সদস্য রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় উন্নয়ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একত্রিত করে।
একইসাথে, তারা ২০২১ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগে ৩০০ বিলিয়ন ইউরো সংগ্রহ করার লক্ষ্য নিয়েছে, নির্ভরতার পরিবর্তে প্রয়োজনীয় সংযোগ তৈরি করবে এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগের ব্যবধান বন্ধ করবে।