নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্বনেতৃবৃন্দের প্রতি যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দয়া করে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিন, আমি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের আহ্বান জানাই উদ্যোগ নিন। আপনারা কিছু একটা করতে পারবেন। অস্ত্রের পেছনে ব্যয় না করে শিশুদের পেছনে খরচ করুন।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ব্রাসেলসে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের উদ্বোধনী প্লেনারি সেশনে তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি শরণার্থী হওয়ার কষ্টটা কোথায়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা গণহত্যা শুরু করেছিল। শেখ মুজিবুর রহমান সেটার বিরোধিতা করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এজন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং অজানা একটি জায়গায় তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। এরপর আমার মা, আমার ছোট ভাই, বোন এবং আমি গ্রেফতার হয়েছিলাম। আমাদের একটি একতলা ভবনে আটকে রাখা হয়েছিল যেখানে কিছুই ছিল না। কোন আসবাবপত্র, কোন খাবার সেখানে ছিল না এবং আমি তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। সারাদিন আমরা তেমন কিছুই পাইনি। সুতরাং আমি জানি যুদ্ধ কি পরিণতি ডেকে নিয়ে আসে।
যুদ্ধের কারনে মানুষের কি ধরনের ভোগান্তি হয় সেটা আমার জানা আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাই আমি সব বিশ্বনেতৃবৃন্দদের প্রতি আহ্বান জানাই, দয়া করে এই যুদ্ধ বন্ধ করুন। আমি কাউকে দোষারোপ দিতে চাই না। আমি শুধু চাই যুদ্ধ বন্ধ হোক। যদি কোন কনফ্লিক্ট থাকে তাহলে আপনারা বসেন এবং আলোচনা করে সমাধান করুন। আমাদের পররাষ্ট্র নীতি খুব পরিষ্কার। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছি। আমরা কিন্তু আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করিনি। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি এবং করছি। তাদেরকে আমরা বলেছি যে, তাদের নাগরিকদের তারা যেন ফেরত নিয়ে যায়। আমাদের প্রতিবেশি এই রাষ্ট্রের সঙ্গে অনেক সমস্যা ছিল, আমরা সমাধান করেছি।
তিনি বলেন, কেন যুদ্ধ, কেন অস্ত্রের প্রতিযোগিতা? যে অর্থ আপনারা অস্ত্রের পেছনে খরচ করেন সেই অর্থ কেন আপনাদের নারী-শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয় করেন না? আপনারা দেখেছেন যে শিশুরা কিভাবে ভুগছে, সর্বত্রই শিশুদের পাশাপাশি নারীরা সবচেয়ে বেশি ভুগছে। আর তরুণ প্রজন্ম তাদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছে, কেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলি, আপনারা জানেন যে আমার ন্যায়বিচার চাওয়ার কোন অধিকার ছিল না। যারা আমার বাবা, মা, ভাইসহ পুরো পরিবারকে হত্যা করেছে, আমার কোন ন্যায়বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না আইন অনুযায়ী। এমনকি আমি ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত একটি মামলাও করতে পারিনি আদালতে। আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আইনটা বাতিল করি এবং হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোরামে তার দেশের অর্জন সম্পর্কে তুলে ধরেন। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে একটি, যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আমাদের ৭০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ১৫ বছরেরও কম সময়ে ৪৬৫ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। আমরা আমাদের লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যতা থেকে বের করে এনেছি। ২০০৬ সালে চরম দারিদ্র্যের হার ছিল ২৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা বর্তমানে কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে কাজ করছে।
তিনি জানান, জীবনের অনেক চেষ্টা করে বেঁচে গেছেন। তার উপর বারবার হামলা করা হয়েছে।
যুদ্ধ বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর আবেগঘন বক্তব্যের প্রশংসা করেছেন বিশ্বনেতৃবৃন্দ। তারা সম্মিলিতভাবে করতালি দিয়ে অভিবাদন জানান।