ঢাকা১০ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আরো
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. দেশজুড়ে
  8. প্রেস বিজ্ঞপ্তি
  9. বিনোদন
  10. মতামত
  11. লাইফ স্টাইল
  12. শিক্ষাঙ্গন
  13. সম্পাদকীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিসিএস কেন তরুণদের ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠছে?

admin
সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ ৫:৪৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক হিসাবমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার। এর আগে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার। মার্চে তা এসে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৯০ হাজারে।

অন্যদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বলছে, দেশের যুব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারের প্রকৃত সংখ্যা অস্বীকার করা হচ্ছে বা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাদের মতে, দেশের ৪৭ শতাংশ শিক্ষিতই বেকার। আর এই বেকারত্বের বড় কারণ, তরুণেরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞানের মাধ্যমে পেশাগত কাজের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না।

তরুণেরা অবশ্য বেকারত্বের সংখ্যা কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দুর্বলতা নিয়ে ভাবতে চান না। তাঁরা চোখ-কান বুজে চাকরির পেছনেই ছুটছেন। তাঁরা জানেন, চাকরির বাজার কঠিন। এর মধ্যে সরকারি চাকরি ‘সোনার হরিণ’–এর মতো; সহজে ধরা দেয় না। আর বেসরকারি চাকরির শর্তে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা; তাই অনেক ক্ষেত্রে আবেদন করাও যায় না। এর বাইরে নিজে উদ্যোগী হয়ে কোনো কাজ করাও অসম্ভবপ্রায়; কারণ বিনিয়োগ করার মতো টাকা তাঁদের হাতে নেই।

এ পরিপ্রেক্ষিতে বিসিএসের জন্য আবেদন করা তরুণদের জন্য সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ উপায়। বিসিএসকে উপলক্ষ করে অন্তত তাঁরা কয়েক বছরের জন্য আশায় বুক বাঁধতে পারেন।

বিসিএস চাকরির প্রতি শিক্ষিত তরুণদের আগ্রহ বাড়ার অনেক কারণ রয়েছে। একটি বড় কারণ, এখন পর্যন্ত বিসিএস নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অনিয়ম ঢুকে পড়েনি। বাছাই পরীক্ষা থেকে শুরু করে ভাইভা পর্যন্ত প্রার্থীকে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে হয়।

এমনকি বিসিএসে এখন কোটার বাড়তি সুবিধা নেই—সব প্রার্থীই সমান সুযোগ নিয়ে প্রতিযোগিতা করেন। বিসিএসের বাইরে সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য পরীক্ষায় অনিয়মের কথা শোনা যায়। পছন্দের প্রার্থীকে নেওয়ার প্রবণতা, অযোগ্য প্রার্থীর জন্য সুপারিশ করা, টাকা দিলে চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া—এগুলো এখন গোপন কোনো ব্যাপার নয়।

সমস্যা আরেক দিকেও আছে। চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখলেই তরুণেরা আবেদন করতে পারেন না। ‘অভিজ্ঞতার অভাব’ তাঁদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান অন্য সব শর্তের সঙ্গে অভিজ্ঞতাও চায়। কিন্তু সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা একজন তরুণের পক্ষে অভিজ্ঞতা দেখানো সম্ভব হয় না।

এদিক থেকে ব্যতিক্রম বিসিএসের নিয়োগপ্রক্রিয়া। আবেদন করার জন্য স্নাতক ডিগ্রি থাকলেই হয়। কোনো রকম পূর্বাভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অভিজ্ঞতার ঘাটতিটুকু পূরণ করা হয়।

বিসিএস চাকরির আরও কিছু সুবিধা রয়েছে। এই চাকরি সমাজে সম্মানজনক হিসেবে দেখা হয়। বিসিএস চাকরি মানে বাকি জীবনে আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। তা ছাড়া সিভিল সার্ভিসে এমন কিছু ক্যাডার রয়েছে, যেগুলো ব্যক্তিকে প্রবল ক্ষমতার অধিকারী করে তোলে। অন্য চাকরির ক্ষেত্রে বিসিএসের মতো এতগুলো ব্যতিক্রমী সুবিধা একসঙ্গে পাওয়া যায় না।

এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি তরুণেরা বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। লক্ষণীয় ব্যাপার, ইদানীং ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াররাও পেশাগত ক্যাডারের চেয়ে বিসিএস সাধারণ ক্যাডারে সুযোগ পেতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন!

এখন প্রশ্ন, বিসিএস নিয়ে এই মাতামাতি কতটুকু কাঙ্ক্ষিত। কোনো কোনো বিজ্ঞজন প্রশ্ন তুলছেন, বিসিএসের প্রতি অতি আগ্রহ তরুণদের ক্ষতি করছে। অবশ্য তরুণেরা তা মনে করেন না। তাঁরা নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়েই চিন্তিত বেশি।

তাঁদের কাছে ক্যারিয়ার মানে ‘নিরাপদ ভবিষ্যৎ’। বিসিএস এই নিশ্চয়তা দেয়। সুতরাং বিসিএস চাকরিকে তাঁরা অগ্রাহ্য করবেন কীভাবে? কিন্তু মুশকিল হলো, তরুণেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই বিসিএস প্রস্তুতি নিতে শুরু করছেন।

বিসিএসের প্রস্তুতি তাঁদের একাডেমিক পড়াশোনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর জন্য তরুণেরা যতটুকু দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপদ্ধতি। বর্তমানে যেসব বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং পরীক্ষায় যে ধরনের প্রশ্ন থাকে, তাতে মুখস্থ না করে উপায় নেই।

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের উচিত প্রশ্নের ধরন পাল্টানো। এমন প্রশ্নের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা উচিত, যাতে প্রকৃত মেধা যাচাই করা সম্ভব হয়। প্রশ্নের মধ্য দিয়ে প্রার্থীর বিশ্লেষণ, চিন্তন ও সৃজন-ক্ষমতার পরিচয় নেওয়া দরকার।

বিসিএসকেন্দ্রিক মাতামাতির পেছনে পত্রপত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। ‘একই পরিবারের দুই বোন একসঙ্গে ক্যাডার হলো’, ‘দারিদ্র্য দমিয়ে রাখতে পারেনি অমুককে’—বিসিএসের ফল প্রকাশের পর এ ধরনের খবর সাধারণ মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহলী করে তোলে।

ভারতের সংবাদমাধ্যমও এ ধরনের খবর পরিবেশন করে। যেমন ‘সিভিল সার্ভিসে সফল দরজির ছেলে’, ‘গোয়ালার মেয়ে এখন সহকারী কমিশনার’ ইত্যাদি শিরোনামে পশ্চিমবঙ্গেও সংবাদ প্রকাশিত হতে দেখা যায়। তার মানে, এ ধরনের সংবাদের প্রতি পাঠকের আগ্রহ আছে।

সিভিল সার্ভিসে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া অবশ্যই সম্মান ও কৃতিত্বের। এ সফলতায় মানুষের উচ্ছ্বাস সেই ব্রিটিশ আমলেও ছিল। শুরুর দিকে এ ধরনের পরীক্ষা লন্ডনে অনুষ্ঠিত হতো। ভারতের কেউ যদি পরীক্ষায় অংশ নিতে চাইতেন, তবে তাঁকে লন্ডনে যেতে হতো।

১৮৬৩ সালে ঠাকুর পরিবারের মেজ ছেলে যখন সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতায় ফেরেন, তখন বিশাল নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। মধুসূদন দত্ত শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি সনেট লিখেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও উপস্থিত ছিলেন সেই সংবর্ধনাসভায়।

দুঃখজনক ব্যাপার হলো, বর্তমানে বিসিএসকে কেন্দ্র করে কোচিং ব্যবসা জেঁকে বসেছে। সেই কোচিংয়ে মূলত তথ্যই মুখস্থ করানো হয়। অথচ তরুণদের দরকার ছিল যোগাযোগদক্ষতা, ভাষাদক্ষতা ও প্রযুক্তিদক্ষতা বাড়ানোর উপায় শেখা।

যেসব তরুণ একের পর এক চাকরির আবেদন করে হতাশ হয়ে পড়ছেন, তাঁদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলাও দরকার। সবচেয়ে দরকার তাঁদের নতুন নতুন ব্যবসার ক্ষেত্র দেখিয়ে দেওয়া। অর্থ বিনিয়োগ ছাড়াও যে অনেক কাজ নিজের উদ্যোগে শুরু করা যায়, সে ধারণা অধিকাংশ তরুণের নেই।

সরকারি চাকরির প্রতি ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য হয়ে পড়ে আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য বলছে, সরকারি চাকরিতে অনুমোদিত পদের প্রায় ২৬ শতাংশ শূন্য, যা সংখ্যায় প্রায় ৫ লাখ। ক্রমান্বয়ে এসব শূন্য পদে নিয়োগের কাজটি চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি বিসিএসের সার্কুলারও নিয়মিত করতে হবে এবং নিয়োগ পরীক্ষা স্বল্পতম সময়ে শেষ করতে হবে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।